কথা রাখা – একটি চরিত্রের পরিচয়
কথা রাখা হল মানুষের নৈতিকতা, চরিত্র ও বিশ্বস্ততার প্রতিচ্ছবি। একজন মানুষ তার কথা ও প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে অন্যের আস্থা অর্জন করে। কিন্তু কথা দিয়ে তা না রাখা শুধু একটি ভুল নয় বরং এটি মানুষের বিশ্বাস ভঙ্গের শামিল।
ইসলাম কী বলে কথা না রাখার ব্যাপারে?
কথা রক্ষা করা ঈমানের অঙ্গ
রাসূল (সা.) বলেছেন: "যে ব্যক্তি কথা রাখে না, তার মধ্যে ঈমান নেই।" (বুখারি ও মুসলিম)
মুনাফিকের লক্ষণ
হাদিসে বলা হয়েছে, "মুনাফিকের তিনটি লক্ষণ আছে – তার মধ্যে একটি হল, সে কথা দিলে তা রাখে না।" (সহিহ বুখারি)
কথা দিয়ে না রাখলে মানুষের উপর কী প্রভাব পড়ে?
বিশ্বাস নষ্ট হয়
মানুষ একবার বিশ্বাস হারালে তা পুনরায় অর্জন করা খুব কঠিন। কথা না রাখলে মানুষ মনে করে আপনি অবিশ্বাসযোগ্য।
সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি হয়
চেনা-পরিচিতদের মাঝে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যেতে পারে, এমনকি পরিবার বা বন্ধুত্বও ভেঙে যায়।
আত্মসম্মান কমে যায়
যারা বারবার কথা ভঙ্গ করে, তাদের প্রতি সমাজের শ্রদ্ধা হারিয়ে যায়।
প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের বাস্তব উদাহরণ
ব্যবসায়িক সম্পর্ক নষ্ট হওয়া
একজন ব্যবসায়ী যখন প্রতিশ্রুতি দিয়ে ডেলিভারি বা টাকা সময়মতো দেয় না, তখন গ্রাহক বা পার্টনারের আস্থা হারিয়ে যায়।
বন্ধুত্ব ভেঙে যাওয়া
বন্ধুকে কথা দিয়ে দেখা না করা বা সহায়তা না করলে সে কষ্ট পায় এবং ধীরে ধীরে সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়।
পারিবারিক সমস্যা
পরিবারে কথা না রাখার ফলে ঝগড়া-বিবাদ, বিশ্বাসহীনতা, এবং দূরত্ব বাড়ে।
যারা কথা রাখে না, তারা কী হারায়?
আল্লাহর রহমত
মানবিক সম্মান
সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা
ভবিষ্যতের সুযোগ
কথা রক্ষা করার উপকারিতা
মানসিক শান্তি
যখন আপনি কথা রাখেন, তখন অন্তরে একটা প্রশান্তি থাকে কারণ আপনি জানেন, আপনি একজন সত্যবাদী।
সমাজে সম্মান বৃদ্ধি
যে কথা রাখে, তাকে সমাজে মানুষ শ্রদ্ধা করে এবং বিশ্বাস করে।
আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ
কোরআনে বলা হয়েছে –
"তোমরা প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করো। প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে তোমাদের জিজ্ঞাসা করা হবে।" (সূরা বনী ইসরাইল: ৩৪)
কথা রক্ষা করার উপায়
১. কম কথা বলা, কিন্তু নির্ভরযোগ্য বলা
যা বলবেন, তা নিশ্চিত হয়ে বলুন।
২. প্রতিশ্রুতি দেওয়ার আগে চিন্তা করুন
কিছু বলার আগে ভাবুন, আপনি সেটা রাখতে পারবেন কি না।
৩. কথা রাখার জন্য সময় মনে রাখুন
একটা ডায়েরি বা ফোনে নোট করে রাখুন – সময়মতো প্রতিশ্রুতি পূরণে সহায়ক হবে।
৪. কথা রাখতে না পারলে আগেই জানিয়ে দিন
কখনো যদি আপনি প্রতিশ্রুতি রাখতে না পারেন, তাহলে আগে থেকেই বুঝিয়ে দিন এবং ক্ষমা চান।
---
কথা না রাখার বিষয়ে সাধারণ প্রশ্ন
প্রশ্ন ১: ইসলাম কেন কথা রাখাকে এত গুরুত্ব দেয়?
উত্তর: কারণ এটি মানুষের চরিত্র, ঈমান ও নৈতিকতার অংশ। যারা কথা রাখে, তাদের উপর আল্লাহ খুশি হন।
প্রশ্ন ২: ভুল করে কথা না রাখলে কি পাপ হয়?
উত্তর: যদি ইচ্ছাকৃত না হয়, তাহলে তা ক্ষমাযোগ্য। কিন্তু বারবার এমন হলে তা মারাত্মক গোনাহ।
প্রশ্ন ৩: একজন মুসলিমের কীভাবে কথা রক্ষা করা উচিত?
উত্তর: চিন্তাভাবনা করে প্রতিশ্রুতি দেওয়া, সময়মতো তা পূরণ করা এবং ভুল হলে আগেই মাফ চাওয়া উচিত।
প্রশ্ন ৪: শিশুদের মাঝে কীভাবে কথা রাখার অভ্যাস গড়ে তুলবো?
উত্তর: নিজে উদাহরণ সৃষ্টি করুন এবং তাদের বুঝিয়ে বলুন কথা রাখার গুরুত্ব।
প্রশ্ন ৫: যারা সবসময় কথা রাখে না, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত?
উত্তর: সাবধান থাকা উচিত, তবে নফরত নয় – বরং ভালোভাবে বুঝিয়ে দেওয়া উচিত।
---
শেষ কথা:
কথা রাখা শুধু একটিমাত্র গুণ নয় – এটি বিশ্বাস, ভালোবাসা ও নৈতিকতার ভিত্তি। যে ব্যক্তি কথা রাখে, সে আল্লাহর কাছেও প্রিয়, মানুষের কাছেও সম্মানিত। তাই আমরা যেন কথা দিয়ে না ভুলি – এই দোয়াই করি।

Comments
Post a Comment